২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন সিনেটর জোশ হোলি (মিসৌরি-রিপাবলিকান) একটি বিল উত্থাপন করেন, যাতে চীন-নির্মিত AI প্রযুক্তি ডিপসিক ব্যবহার, আমদানি বা উন্নয়ন করলে ঐ ব্যক্তির সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড এবং $১ মিলিয়ন জরিমানা আর কোম্পানির ক্ষেত্রে $১০০ মিলিয়ন জরিমানা প্রস্তাব করা হয় । এই আইনের পেছনের যুক্তি ও সমালোচনা নিয়ে একটি নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ নীচে দেয়া হলো।
কেন ডিপসিক নিষিদ্ধের প্রস্তাব?

জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি: মার্কিন আইনপ্রণেতাদের মতে, ডিপসিক ব্যবহারকারীদের ডেটা চীনের সার্ভারে সংরক্ষিত হয়, যা চীনা সরকারের হাতে যেতে পারে। এটি টিকটকের মতোই ডেটা প্রাইভেসি ও গোয়েন্দা ঝুঁকি তৈরি করে ।
অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা: ডিপসিকের AI মডেল (যেমন DeepSeek-R1) কম খরচে ChatGPT-এর সমান দক্ষতা দেখিয়েছে, যা মার্কিন AI শিল্পকে পিছিয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা ।
সামরিক ব্যবহারের সম্ভাবনা: চীনের AI অগ্রগতি সামরিক ও নজরদারি প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হতে পারে—এই ভয় থেকে নিষেধাজ্ঞার উদ্যোগ ।
বিলের প্রস্তাবিত শাস্তি ও প্রভাব

ব্যক্তির জন্য: ২০ বছর কারাদণ্ড বা $১ মিলিয়ন জরিমানা ।
কোম্পানির জন্য: $১০০ মিলিয়ন জরিমানা ।
অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা: চীনের সাথে AI গবেষণা, বিনিয়োগ বা প্রযুক্তি বাণিজ্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ।
বাজার প্রতিক্রিয়া: এনভিডিয়ার মতো টেক কোম্পানির শেয়ার দর ধস ।
বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া ও পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞা

ইতালি, টেক্সাস, তাইওয়ান: ডেটা প্রাইভেসি উদ্বেগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে ডিপসিক নিষিদ্ধ ।
ভারতের পদক্ষেপ: ডেটা স্থানীয় সার্ভারে সংরক্ষণের পরিকল্পনা ।
অস্ট্রেলিয়া: নিষেধাজ্ঞার দিকে এগোচ্ছে ।
বিলের সমালোচনা ও বিতর্ক
অতিসরলীকরণ: বিলের ভাষ্য এতটাই সাধারণ যে টেমুর মতো শপিং অ্যাপও এর আওতায় পড়তে পারে ।
উদ্ভাবনে বাধা: AI গবেষণায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিঘ্নিত হতে পারে ।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য?: সমালোচকদের মতে, এটি চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধের অংশ এবং মার্কিন বাজার রক্ষার অজুহাত।
নিরপেক্ষ মূল্যায়ন: নিরাপত্তা নাকি স্বাধীনতা?
বিলটির উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করা হলেও, এর কঠোর বিধিনিষেধ এবং শাস্তির মাত্রা প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও গবেষণার জন্য হুমকি হতে পারে। AI প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং ওপেন-সোর্স উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ, যা এই বিলের মাধ্যমে সীমিত হতে পারে।
সুরক্ষা বনাম উদ্ভাবন: জাতীয় নিরাপত্তা জরুরি, তবে AI-এর মতো গতিশীল ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘমেয়াদে উদ্ভাবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ডেটা নিয়ন্ত্রণ: ভারতের মতো স্থানীয় সার্ভারে ডেটা সংরক্ষণ একটি সমাধান হতে পারে ।
আন্তর্জাতিক প্রভাব: মার্কিন-চীন প্রযুক্তি বিচ্ছিন্নতা বৈশ্বিক AI উন্নয়নের গতিপথ বদলে দিতে পারে।
উপসংহার:
ডিপসিক নিষিদ্ধের প্রস্তাব জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ, তবে এর সম্ভাব্য অপপ্রয়োগ এবং উদ্ভাবনী স্বাধীনতায় প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। ব্যবহারকারীদের জন্য সচেতনতা এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য সুচিন্তিত সমাধানই এই দ্বন্দ্বের সেরা পথ ।