সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত “গোল্ড কার্ড স্কিম” নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। এই স্কিমের মাধ্যমে ধনী বিদেশি নাগরিকরা $৫ মিলিয়ন (প্রায় ৬০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করে আমেরিকায় স্থায়ী বসবাস ও নাগরিকত্বের পথ পেতে পারবেন বলে দাবি করা হয়েছে । তবে এই প্রস্তাবের পেছনে যেমন কিছু সম্ভাবনা আছে, তেমনি বিতর্ক ও সীমাবদ্ধতাও কম নয়। চলুন বিস্তারিত জানা যাক!

গোল্ড কার্ড স্কিম কী?

ট্রাম্পের গোল্ড কার্ড স্কিমটি মূলত বিদ্যমান EB-5 ভিসা প্রোগ্রাম-এর পরিবর্তে চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। EB-5 প্রোগ্রামে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা $৮০০,০০০ থেকে $১.০৫ মিলিয়ন বিনিয়োগ করে গ্রিন কার্ড পাওয়ার সুযোগ পেতেন, তবে গোল্ড কার্ডের জন্য এই অর্থ $৫ মিলিয়নে উন্নীত করা হয়েছে। নতুন এই প্রস্তাবে সরাসরি অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিলে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি মিলবে, এবং পরবর্তীতে নাগরিকত্বের পথও খুলে যাবে ।

ট্রাম্পের গোল্ড কার্ড স্কিম

গোল্ড কার্ড স্কিমের সুবিধাসমূহ

১. বিরক্তিকর নিয়ম-কানুন হ্রাস 

 EB-5 প্রোগ্রামে বিনিয়োগের পাশাপাশি নির্দিষ্ট সংখ্যক চাকরি সৃষ্টির শর্ত পূরণ করতে হতো, যা জটিল এবং সময়সাপেক্ষ ছিল । গোল্ড কার্ডে এই ধরনের শর্ত থাকবে না বলে দাবি করা হয়েছে, যার ফলে প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুততর হবে। 

২. অসীম ভিসার সুযোগ

 EB-5-এর বার্ষিক ক্যাপ ছিল মাত্র ~১০,০০০ ভিসা, কিন্তু গোল্ড কার্ডে কোনো সংখ্যাগত সীমা নেই। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি অনুযায়ী, ১০ লক্ষ গোল্ড কার্ড বিক্রি করে $৫ ট্রিলিয়ন আয় করা সম্ভব, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি কমাতে সাহায্য করবে। 

৩. দ্রুত প্রসেসিং সময় 

 EB-5 ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া কয়েক বছর সময় নিত, বিশেষ করে চীন থেকে আসা আবেদনকারীদের জন্য । গোল্ড কার্ডে এই সময় কমিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। 

৪. আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি

 মাল্টা, পর্তুগাল, বা গ্রিসের মতো দেশগুলি কম খরচে রেসিডেন্সি অফার করে । গোল্ড কার্ডের মাধ্যমে আমেরিকা ধনী বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণে এগিয়ে থাকতে পারে। 

গোল্ড কার্ড স্কিমের অসুবিধাসমূহ 

১. আইনি জটিলতা

 EB-5 প্রোগ্রাম কংগ্রেস দ্বারা অনুমোদিত, তাই ট্রাম্প একতরফাভাবে এটি বাতিল বা পরিবর্তন করতে পারবেন না । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গোল্ড কার্ড বাস্তবায়নে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন, যা অনিশ্চিত । 

২. অযৌক্তিক বিনিয়োগ পরিমাণ 

 $৫ মিলিয়নের এই অর্থ EB-5-এর তুলনায় ৬ গুণ বেশি! বিশ্বজুড়ে মাত্র ~৩৭ মিলিয়ন মানুষ এই পরিমাণ বিনিয়োগ করতে সক্ষম , এবং তাদের অনেকেই ইতিমধ্যেই আমেরিকায় রয়েছেন । এছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নে রেসিডেন্সি পেতে €২০০,০০০-€৭৭৫,০০০ খরচ হয়, যা গোল্ড কার্ডের তুলনায় সাশ্রয়ী । 

৩. অর্থনৈতিক সুবিধার অভাব

   EB-5-এ বিনিয়োগ সরাসরি ব্যবসা বা চাকরি সৃষ্টিতে যেত, কিন্তু গোল্ড কার্ডের অর্থ সরকারি খাতেই জমা হবে । ফলে স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশে সরাসরি ভূমিকা কমবে। 

৪. ট্যাক্সের বোঝা 

 মার্কিন নাগরিকদের বৈশ্বিক আয়ের উপর কর দিতে হয়, যা অন্যান্য দেশের প্রোগ্রামে নেই । অনেক বিনিয়োগকারী এই কারণে গোল্ড কার্ডে আগ্রহ হারাতে পারেন। 

৫. নৈতিক বিতর্ক

এই স্কিমটি “টাকা দিয়ে নাগরিকত্ব কেনা” নামে সমালোচিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সামাজিক বৈষম্য বাড়াবে এবং অভিবাসন নীতির মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে যাবে। 

ট্রাম্পের গোল্ড কার্ড স্কিম

বিশেষজ্ঞদের মতামত 

– কমার্স সেক্রেটারি হাওয়ার্ড লাটনিক-এর দাবি, প্রথম দিনেই ১,০০০ গোল্ড কার্ড বিক্রি হয়েছে। 

– হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স-এর ডোমিনিক ভোলেক বলছেন, বিশ্বে মাত্র ~৩০০,০০০ মানুষের $৫০ মিলিয়ন লিকুইড নেট ওয়ার্থ আছে, তাই এই স্কিম সীমিত সুবিধাই দেবে। 

– ইমিগ্রেশন আইনজীবী কেভিন ডিক্সলার সতর্ক করেছেন, এই প্রস্তাব বাস্তবায়নে কংগ্রেসের ভূমিকা অপরিহার্য। 

সিদ্ধান্ত

ট্রাম্পের গোল্ড কার্ড স্কিম উচ্চাভিলাষী হলেও এর আইনি, অর্থনৈতিক, এবং নৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো এখনো অমীমাংসিত। যদিও ধনী বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি সরল পথ হতে পারে, তবুও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতির সাথে সামঞ্জস্য বিচার করা জরুরি। এই স্কিম ভবিষ্যতে কী রূপ নেয়, তা সময়ই বলে দিবে! 

দ্রষ্টব্য: এই ব্লগ পোস্টটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য এবং আর্থিক বা বিনিয়োগ পরামর্শ গঠন করে না। কোনো আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা করা এবং একজন যোগ্য পেশাদারের সাথে পরামর্শ করা অপরিহার্য।

Share.
Leave A Reply

error: Content is protected !!
Exit mobile version