ভূমিকা
বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন মোড় এসেছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ নেতা রাব্বি আলম দাবি করেছেন যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীঘ্রই আবারও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসবেন। এই দাবির পাশাপাশি তিনি ভারত সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, যারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছেন এবং নিরাপদ ভ্রমণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এই ঘটনা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আজকের এই ব্লগে আমরা এই খবরের সাম্প্রতিক উন্নয়নগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরব।
পটভূমি
শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে আসছেন। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে, ২০২৪ সালের আগস্টে সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্র আন্দোলনের জেরে সহিংস সংঘর্ষ শুরু হয়। এই আন্দোলন শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনে রূপ নেয়, যার ফলে ৬০০-এর বেশি মানুষ প্রাণ হারায় এবং হাজার হাজার আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তিনি পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।
তারপর থেকে বাংলাদেশে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। এই সরকারে ছাত্র নেতারাও গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তবে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে রয়েছে গণগ্রেপ্তার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। তিনি এই অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ
২০২৫ সালের ১২ মার্চ আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা রাব্বি আলম এএনআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, শেখ হাসিনা শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসবেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এই খবরে তিনি ভারতের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, “আমাদের অনেক নেতা ভারতে আশ্রয় পেয়েছেন। ভারত সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমাদের নিরাপদ ভ্রমণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, আমরা এজন্য কৃতজ্ঞ।”
রাব্বি আলম বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে মোহাম্মদ ইউনুসের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করেন। তিনি ছাত্র আন্দোলনকে “সন্ত্রাসী উত্থান” হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আক্রান্ত হয়েছে, এটি আন্তর্জাতিকভাবে সমাধান করা দরকার।”
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু ভারত এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক সাড়া দেয়নি, যা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের জটিলতাকে তুলে ধরে।
তরুণ প্রজন্ম নিয়ে অবাক করা মন্তব্য
রাব্বি আলমের বক্তব্যে একটি আকর্ষণীয় বিষয় উঠে এসেছে। তিনি বলেন, “তরুণ প্রজন্ম ভুল করেছে, তবে এটা তাদের দোষ নয়; তারা প্রভাবিত হয়েছে।” এই মন্তব্য আন্দোলনের পেছনে বাহ্যিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দেয়, যা রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিলতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
সম্ভাব্য প্রভাব
শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসার দাবি এখনো অনুমানভিত্তিক হলেও, এটি আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফিরে আসার পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়। দলটি ইতিমধ্যে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে, দলের শীর্ষ নেতারা নির্বাসনে এবং তৃণমূল কর্মীরা প্রতিশোধের শিকার হচ্ছেন, যা তাদের পুনরুত্থানে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ভারতের ভূমিকাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে তার ঐতিহাসিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে, তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করা তার জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে।
উপসংহার
শেখ হাসিনার ফিরে আসার সম্ভাবনা এবং আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। তবে, এটি বাস্তবায়িত হবে কিনা, তা নির্ভর করছে দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের ওপর। এই ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দিকনির্দেশনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।