“No Other Land” একটি বহুল প্রশংসিত প্রামাণ্যচিত্র, যা ফিলিস্তিনের মাসাফার ইয়াত্তা অঞ্চলে চলমান সংকট এবং প্রতিরোধ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নির্মিত। এটি ২০২৪ সালে নির্মাণের পর থেকে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলে এবং শেষমেশ ২০২৫ সালে সেরা প্রামাণ্যচিত্রের জন্য অস্কার পুরস্কার অর্জন করে। ডকুমেন্টারিটি শুধু চলচ্চিত্র মাধ্যমেই নয়, বাস্তব জীবনেও একটি “প্রতিরোধের কর্ম” হিসেবে বিবেচিত – এর নির্মাতারা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ন্যায়বিচারের পথে একটি সোচ্চার কণ্ঠ হিসেবে একে উপস্থাপন করেছেন। এই ব্লগ পোস্টে আমরা “No Other Land” ডকুমেন্টারির পেছনের পটভূমি, এতে দেখানো ঘটনার বর্তমান অবস্থা, সামাজিক-রাজনৈতিক প্রভাব, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যতে সংকট সমাধানের সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

পটভূমি: ডকুমেন্টারির নির্মাণ ও উদ্দেশ্য

“No Other Land” ডকুমেন্টারির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বাস্তব জীবন থেকে সংগৃহীত গল্প ও ভিডিও দিয়ে। ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্ট বাসেল আদরা এবং তার সহযোগীরা বছর ধরে মাসাফার ইয়াত্তার গ্রামগুলোতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর উচ্ছেদ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছিলেন। বাসেল শৈশব থেকেই নিজের কমিউনিটির জবরদস্তি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে ক্যামেরা হাতে লড়াই চালিয়ে গেছেন। এই ডকুমেন্টারির সহ-নির্দেশকদের দলে বাসেলের পাশাপাশি ছিলেন আরও তিনজন: ফিলিস্তিনি কর্মী হামদান বল্লাল এবং দুই ইসরায়েলি সাংবাদিক-চলচ্চিত্র নির্মাতা ইউভাল আব্রাহামরাচেল সজর। চারজনের এই দলটি ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি মিলিত উদ্যোগে ডকুমেন্টারিটি তৈরি করেছেন, যা সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে এক অনন্য সহযোগিতার উদাহরণ। তাঁরা নিজেরাই একে বলেছেন ন্যায়বিচারের পথে একটি “প্রতিরোধের কর্ম”, অর্থাৎ সিনেমা নির্মাণকেই তাঁরা শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

ডকুমেন্টারিটি নির্মাণের পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল মাসাফার ইয়াত্তার মানুষের কষ্টের সত্যচিত্র বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা। পরিচালক বাসেল আদরা একজন স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে দেখতে পাচ্ছিলেন কীভাবে তার সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হচ্ছে এবং মানুষকে তাদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সাংবাদিক ইউভাল আব্রাহামের সাথে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে এই ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করার প্রয়াসে। ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর হলেও একই লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ এই সহকর্মীরা স্থির করেন যে, তাঁরা একটি তথ্যচিত্র বানাবেন যা ব্যক্তিগত গল্পের মাধ্যমে বৃহত্তর রাজনৈতিক সত্য তুলে ধরবে। প্রযোজক ফাবিয়েন গ্রিনবার্গ ও বার্ড কিয়োগে রনিং-এর সহায়তায় এবং নরওয়ে ও ফিলিস্তিনের যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটির কাজ শুরু হয়।

নির্মাণ প্রক্রিয়া ছিল দীর্ঘ এবং চ্যালেঞ্জপূর্ণ। ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় চার বছর জুড়ে মাসাফার ইয়াত্তা এলাকায় শুটিং চালানো হয়। এই সময়কালে পরিচালক দলের সদস্যরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ভিডিও ধারণ করেছেন। বাসেল ও তার পরিবার-প্রতিবেশীরা পূর্ববর্তী ২০ বছর ধরে সংগ্রহ করে রাখা ভিডিও আর্কাইভও তাঁরা চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেছেন, যাতে ঐতিহাসিক প্রমাণও উঠে আসে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দুইবার বাসেলের বাড়িতে হানা দিয়ে তাঁর কম্পিউটার ও ক্যামেরা জব্দ করেছিল, যা নির্মাতাদের জন্য ছিল বিশাল ঝুঁকিপূর্ণ ও মানসিক চাপের বিষয়। তবুও দলটি হাল ছাড়েনি; প্রচুর ফুটেজ সংগ্রহের পর কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সঙ্গে তা সম্পাদনা করে শেষ পর্যন্ত চলচ্চিত্র নির্মাণে সফল হয়। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে “No Other Land” প্রথম প্রদর্শিত হয় এবং সেখানেই সেরা প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে দর্শক পুরস্কার ও জুরি পুরস্কার দুটোই অর্জন করে। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় পরে এটি একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে (অস্কার) সেরা ডকুমেন্টারি ফিচার_film_ বিভাগেও বিজয়ী হয়, যা ফিলিস্তিনি কোনো চলচ্চিত্রের জন্য ঐতিহাসিক অর্জন।

ডকুমেন্টারির বর্ণনায় দেখা যায়, বাসেল আদরা শিশু বয়স থেকেই যেসব অন্যায় প্রত্যক্ষ করে আসছেন সেগুলো ক্যামেরায় ধারণ করে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন। ইসরায়েল ১৯৮০-এর দশকেই মাসাফার ইয়াত্তার বিস্তীর্ণ ভূমিকে সামরিক “ফায়ারিং জোন ৯১৮” হিসাবে চিহ্নিত করে রেখেছিল এবং ২০০০-এর দশকে আদালতের আদেশের মাধ্যমে এলাকাটিকে খালি করার পরিকল্পনা তৈরি হয়। বাসেল তার ডকুমেন্টেশনের মাধ্যমে দেখান কীভাবে ইসরায়েলি সেনারা গ্রামের ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দিচ্ছে, পানির রিজার্ভারগুলো সিমেন্ট দিয়ে ভরাট করে দিচ্ছে যাতে পুনর্গঠন করা না যায়, এমনকি গ্রামের স্কুলটিকেও বুলডোজার দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে। এসব নিষ্ঠুর বাস্তবতার বিপরীতে বাসেল ও তার সম্প্রদায়ের লোকজন শেষপর্যন্ত নিজ ভূমিতে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, আর ইউভালের মতো ইসরায়েলিরাও সেই কাহিনী বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে তাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন।

বর্তমান পরিস্থিতি: মাসাফার ইয়াত্তার বাস্তব চিত্র

ডকুমেন্টারিতে ফুটে ওঠা ঘটনাগুলোর বর্তমান অবস্থা বেশ শোচনীয় এবং উদ্বেগজনক। মাসাফার ইয়াত্তার যে এলাকাগুলোতে ফিলিস্তিনি সম্প্রদায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বসবাস করে আসছে, সেগুলোকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এখনো “মিলিটারি ট্রেনিং জোন” বা মহড়া এলাকার দাবিতে খালি করানোর চেষ্টা করছে। ২০২২ সালের মে মাসে ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত (হাইকোর্ট) এক রায়ে জানিয়ে দেয় যে মাসাফার ইয়াত্তা থেকে অধিবাসীদের উৎখাতে আর কোনো আইনি বাধা নেই, অর্থাৎ সরকার চাইলে তাদের উচ্ছেদ করতে পারে। আদালতের এই সিদ্ধান্তের পর উচ্ছেদ প্রক্রিয়া আরও বেগবান হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানে ঘরবাড়ি ধ্বংস, জমি বাজেয়াপ্ত এবং বসতিহীন করার ঘটনা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

মাসাফার ইয়াত্তা অঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনী দ্বারা একটি ফিলিস্তিনি বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের আগস্টে এমন এক অভিযানে কয়েকটি গ্রাম উচ্ছেদ করে ত্রিশেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে বাস্তুহারা করা হয়। এই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ মাসাফার ইয়াত্তায় খুব সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে, যেখানে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল—সমস্ত কিছুই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সমন্বয় সংস্থা (UNOCHA) জানিয়েছে, ২০২4 সাল ছিল অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি-সংক্রান্ত সহিংসতার সবচেয়ে ভয়াবহ বছর; সে বছর প্রতি দিনে গড়ে চারটি করে সহিংস ঘটনার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের সম্পত্তি ধ্বংস অথবা দখল করা হয়েছে, যা ২০২২ সালের দৈনিক গড়ের দ্বিগুণ। এসব হামলা ও উচ্ছেদের ফলে অক্টোবর ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ মেয়াদে পশ্চিম তীরে ৩০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি পরিবার (প্রায় ১,৭৬২ জন মানুষ, যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু) বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছে।

ডকুমেন্টারিতে বিশেষ করে মাসাফার ইয়াত্তার শিব আল-বুতুম নামের যে গ্রামটির কথা তুলে ধরা হয়েছে, তার অবস্থাও বর্তমানে খুব নাজুক। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০২৫ সালের শুরুর দিকে সতর্ক করেছে যে শিব আল-বুতুমসহ ঐ অঞ্চলের প্রায় এক ডজন গ্রাম এখন তৎক্ষণাৎ জোরপূর্বক স্থানান্তরের ঝুঁকিতে আছে। অক্টোবর ২০২৩ এ গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের ওপর বসতি স্থাপনকারীদের সহিংস হামলা এবং সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন বহুগুণে বেড়েছে। ফলস্বরূপ, মাসাফার ইয়াত্তার অনেক পরিবার ইতিমধ্যে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে কিংবা গুহা বা সাময়িক আশ্রয়ে দিন কাটাচ্ছে। একটি উদাহরণ হিসেবে, নিকটবর্তী একটি গ্রামের পুরো সম্প্রদায় ক্রমাগত হামলার মুখে ২০২৪ সালে নিজেদের গ্রাম ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে, যা ইতোমধ্যে বাস্তবে সমাপ্ত একটি জাতিগত উচ্ছেদ ঘটনারূপে চিহ্নিত হয়েছে। এভাবে মাসাফার ইয়াত্তার জমি থেকে ফিলিস্তিনিদের মুছে ফেলার প্রক্রিয়া আজও চলমান, এবং ডকুমেন্টারিতে প্রদর্শিত প্রতিটি হৃদয়বিদারক ঘটনার রেশ বাস্তব জীবনে এখনো অনুভূত হচ্ছে।

বর্তমান এই পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, বাসিন্দাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের স্থানান্তর করা চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং এটি যুদ্ধাপরাধের শামিল। তবুও, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ মাসাফার ইয়াত্তাকে ফায়ারিং জোন হিসেবে খালি করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর এই এলাকায়, কেননা এটি ১৯৬৭ সালের পর সবচেয়ে বড় ফিলিস্তিনি জনবসতি উচ্ছেদের ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে যদি পুরো পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হয়। ডকুমেন্টারির ক্যামেরায় ধরা পড়া ধ্বংসস্তুপ, আহত ও আতঙ্কিত মানুষের দৃশ্যগুলো আজও মাসাফার ইয়াত্তার দৈনন্দিন বাস্তবতা, যা ইঙ্গিত দেয় যে “No Other Land” কোনো বন্ধ অধ্যায়ের গল্প নয় বরং এক অব্যাহত সংকটের জীবন্ত দলিল।

সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব: জনমত ও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন

“No Other Land” প্রকাশের পর থেকে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। প্রথমত, জনমতের ক্ষেত্রে এই ডকুমেন্টারি ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার প্রতি বিশ্বব্যাপী সহানুভূতি ও সমর্থন জোগাড় করতে সক্ষম হয়েছে। চলচ্চিত্রটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে দর্শক পুরস্কার জেতার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝে আলোড়ন তোলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় #SaveMasaferYatta সহ বিভিন্ন হ্যাশট্যাগে প্রচারণা জোরদার হয়। বিশেষ করে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে অস্কার জয় করার পর, এটি মূলধারার মিডিয়াতেও বড় আলোচনা বিষয়বস্তু হয়ে উঠে। বস্তুত, অস্কারের মঞ্চে পুরস্কার গ্রহণকালে পরিচালক বাসেল আদরা তাঁর বক্তৃতায় বলেন যে এই ডকুমেন্টারি “গত কয়েক দশক ধরে চলমান কঠোর বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে, এবং আমরা এখনো প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছি – বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাই এই অবিচার বন্ধ করতে ও ফিলিস্তিনি জনগণের জাতিগত নির্মূল বন্ধ করতে”। তাঁর এই প্রত্যক্ষ আহ্বান পৃথিবীর নানা প্রান্তে দর্শকদের নাড়া দিয়েছে এবং মাসাফার ইয়াত্তার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা তীব্রতর করেছে।

২০২৫ সালের একাডেমি পুরস্কার গ্রহণের মঞ্চে “No Other Land” ডকুমেন্টারির নির্মাতা দল সেরা প্রামাণ্যচিত্রের জন্য অস্কার হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চলচ্চিত্রটিকে কেবল প্রশংসার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে তাই নয়, একইসাথে ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বজনমতেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বহু দর্শক এই প্রামাণ্যচিত্র দেখার পর সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং ইসরায়েলের নীতির সমালোচনা করেছেন। চলচ্চিত্রটির অন্যতম পরিচালক ইসরায়েলি সাংবাদিক ইউভাল আব্রাহাম অস্কারের মঞ্চ থেকেই ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মানুষের মধ্যে সমতার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমরা ভিন্ন আইনের অধীনে বসবাস করছি – আমি নাগরিক আইনের আওতায় স্বাধীন জীবন পাই, আর বাসেল সামরিক আইনের অধীনে নিপীড়নের শিকার। আমাদের জন্য ভিন্ন একটি পথ আছে, যেখানে জাতিগত আধিপত্য থাকবে না, বরং উভয় জনগোষ্ঠীর জাতীয় অধিকারের স্বীকৃতি থাকবে”। এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের নীতিরও সমালোচনা করে, কেননা আব্রাহামের মতে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ন্যায়সংগত সমাধানের পথে বাধা তৈরি করছে। অস্কারের মতো বৃহৎ মঞ্চে এভাবে স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতিনির্ধারকদের ওপরও একটি চাপ সৃষ্টি হয়েছে মানবাধিকার ইস্যুটি বিবেচনায় নেওয়ার জন্য।

রাজনৈতিক অঙ্গনে “No Other Land” মিশ্র প্রতিক্রিয়া জন্ম দিয়েছে। একদিকে মানবাধিকার সংগঠন ও শান্তিকামী জনগণ চলচ্চিত্রটির প্রশংসা করছে এবং এটি ইসরায়েলি নীতির প্রয়োজনীয় সমালোচনা তুলে ধরেছে বলে মত দিয়েছে; অন্যদিকে ইসরায়েলের রক্ষণশীল মহল ও সরকার চলচ্চিত্রটির সমালোচনায় মুখর হয়েছে। ইসরায়েলের সংস্কৃতি মন্ত্রী মিকি জোহর অস্কারে ডকুমেন্টারিটির জয়কে “বিশ্ব সিনেমার জন্য দুঃখজনক মুহূর্ত” বলে উল্লেখ করেন এবং দাবি করেন যে এই চলচ্চিত্র “ইসরায়েল সম্পর্কে বিকৃত ধারণা প্রচার করছে”। তিনি এমনও ইঙ্গিত দেন যে অক্টোবরে হামাসের হামলা ও পরবর্তি যুদ্ধের প্রেক্ষিতে এই ধরনের তথ্যচিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে “ধ্বংসাত্মক প্রচারণা” হিসেবে কাজ করছে। ইসরায়েলি সরকারের এই কঠোর মনোভাব দেখায় যে চলচ্চিত্রটি সরকারকে বিতর্কিত অবস্থায় ফেলেছে এবং তারা এর ভাবমূর্তি নিয়ে শঙ্কিত। এমনকি রাজনৈতিক চাপের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রে কোনও পরিবেশক প্রতিষ্ঠান শুরুতে “No Other Land” প্রদর্শনের অধিকার নিতে আগ্রহী হয়নি বলে নির্মাতারা ধারণা করছেন। যদিও ২৪টি দেশে ছবিটি প্রদর্শনের জন্য ক্রয় করা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে কোন ডিস্ট্রিবিউটর পাওয়া যায়নি, যা রাজনৈতিক প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়।

তবে সমালোচনা সত্ত্বেও, “No Other Land” ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি সমাজের প্রগতিশীল অংশের মধ্যে বিরল সংলাপের সুযোগও তৈরি করেছে। ইসরায়েলের মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও সাধারণ জনগণের অনেকেই এই চলচ্চিত্র দেখে নিজেদের সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলার সাহস পাচ্ছেন। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি তরুণরাও দেখছেন যে তাদের কণ্ঠ বিশ্বমঞ্চে উঠে আসতে পারে। এক যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরি এই ডকুমেন্টারি বোঝাচ্ছে যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে উভয় সম্প্রদায়ের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ একত্র হতে পারেন। সামাজিকভাবে এটি নিঃসন্দেহে একটি আশার বার্তা ছড়িয়েছে: যেখানে অনেকে মনে করেন ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি পক্ষ শুধুই বিরোধিতা করবে, সেখানে এই ছবি দেখাচ্ছে মানবাধিকারের পক্ষে দু’পক্ষ একসাথে লড়াই করতে পারে।

মানবিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ ও পদক্ষেপ

“No Other Land” যে মানবিক সংকটকে তুলে ধরেছে, তা নিয়ে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বহুদিন ধরেই মাসাফার ইয়াত্তা এবং সমগ্র অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের উচ্ছেদ অভিযানের নিন্দা জানিয়ে আসছে। চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে বিষয়টি পুনরায় বিশ্বমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসায়, Amnesty International এবং Human Rights Watch-এর মতো সংগঠনগুলো আরও জোরাল বিবৃতি দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, অস্কার পুরস্কার ঘোষণার সপ্তাহেই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সতর্ক করে বলে যে মাসাফার ইয়াত্তা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হলে তা হবে ১৯৬৭ সালের পর সবচেয়ে বড় ব্যতিক্রমহীন স্থানান্তরের ঘটনা এবং এটি স্পষ্টতই “জাতিগত নিধন” হিসাবে গণ্য হবে। তাদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েল যে ধরনের “কৌশলী ভীতি ও নিপীড়নমূলক পরিবেশ” তৈরি করেছে মাসাফার ইয়াত্তায়, তা সাধারণ মানুষের জন্য এক অসম্ভব পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, যা তাদের ভূমি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করছে – আর এটিই ইসরায়েলি নীতির লক্ষ্য। আন্তর্জাতিক আইন মোতাবেক এসব কার্যক্রম গুরুতর অপরাধ এবং এজন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার হওয়া উচিত বলেও মানবাধিকার সংস্থাগুলো জোর দাবি তুলেছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ডকুমেন্টারিটির বিষয়বস্তু ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরার মতো শীর্ষস্থানীয় মিডিয়ায় মাসাফার ইয়াত্তা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে “No Other Land” এর উদ্ধৃতি দিয়ে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চলচ্চিত্রটির অস্কার জয়ের পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন যে পশ্চিম তীরে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং বসতি স্থাপনকারীদের হামলা নিয়ে তিনি “গভীরভাবে উদ্বিগ্ন”, বিশেষ করে মাসাফার ইয়াত্তার মতো এলাকা যেখানে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিয়ে ভূখণ্ড সংযোজনের (অ্যানেক্সেশন) আহ্বান উঠছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখনই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি, না হলে অধিকৃত অঞ্চলে সহিংসতার মাত্রা আরও ভয়াবহ রূপ নেবে। বিভিন্ন দেশের সরকার ও কূটনীতিকরাও মাসাফার ইয়াত্তার ঘটনাবলিকে নজরে এনেছেন; ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু প্রতিনিধি দল ২০২২ ও ২০২৩ সালে ঐ এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

ডকুমেন্টারির বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি (বার্লিনালেতে পুরস্কার, অস্কার জয়) এই সংকটের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০২৪ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে দর্শক পুরস্কার জেতার পর জার্মানি ও ইউরোপের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম মাসাফার ইয়াত্তার পরিস্থিতি নিয়ে ফলো-আপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। একইভাবে, অস্কার জয়ের খবর আসার পর মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া সহ বহু অঞ্চলের টেলিভিশন ও পত্রিকায় ফিচার বেরোয়। এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনমত তৈরিতে ভূমিকা রাখছে, যাতে বিভিন্ন দেশের জনগণ ও আইনপ্রণেতারা ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হন। ফলশ্রুতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ এবং নিরাপত্তা পরিষদেও মাসাফার ইয়াত্তার প্রসঙ্গটি নতুন করে আলোচিত হয়েছে।

মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে, ডকুমেন্টারিটি দুনিয়াজুড়ে সহানুভূতির ঢেউ তুলেছে। বিশ্বের বহু জায়গায় নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো মাসাফার ইয়াত্তার অধিবাসীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে র‍্যালি ও প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করেছে। লন্ডন, নিউইয়র্ক, টোকিও থেকে শুরু করে ঢাকা পর্যন্ত বিভিন্ন শহরে মানববন্ধন ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে “No Other Land”-এ উঠে আসা বার্তাগুলো প্রচারিত হয়েছে। এই প্রতিক্রিয়ার ফলে ইসরায়েলি নীতির বিরোধিতা শুধু মধ্যপ্রাচ্য বা মুসলিম বিশ্বেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং বৈশ্বিক মানবাধিকার ইস্যুতে পরিণত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই এখন সরাসরি একে “এথনিক ক্লিনজিং” বা জাতিগত নির্মূল প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করছেন, যা আগের যে কোনও সময়ের তুলনায় জোরালো ভাষা। বিশ্ব গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থা ও সাধারণ মানুষের মিলিত কণ্ঠ মাসাফার ইয়াত্তার নিরীহ পরিবারগুলোর পক্ষে এক ধরনের রক্ষাকবচ তৈরি করছে। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে জোরপূর্বক উচ্ছেদ সম্পূর্ণ থামানো যায়নি, তবে আন্তর্জাতিক চাপের কারণে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কিছুটা হলেও প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থানে আছে – অন্তত বৈশ্বিক সমালোচনার বিষয়টি এখন তারা উপেক্ষা করতে পারছে না।

ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সমাধান: সংকট নিরসনের পথ ও পদক্ষেপ

মাসাফার ইয়াত্তার এই সংকট সমাধানে এবং ডকুমেন্টারিতে তুলে ধরা অবিচার দূর করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। সমস্যা যত জটিলই হোক, বিশ্বজনমত ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এর শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। নিচে সম্ভাব্য কিছু সমাধানমূলক পদক্ষেপ আলোচনা করা হলো:

  1. আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ: বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমন্বিত চাপ ইসরায়েলের নীতিনির্ধারকদের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসি সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে ইসরায়েলের উপর কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে হবে যাতে তারা মাসাফার ইয়াত্তা সহ পশ্চিম তীরের জোরপূর্বক উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ করে। শক্তিশালী বিবৃতি, প্রস্তাব পাস, এমনকি প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞার হুমকি – এই ধরনের পদক্ষেপ ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন মানতে বাধ্য করতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; মার্কিন প্রশাসন যদি এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়, ইসরায়েলের জন্য উপেক্ষা করা কঠিন হবে।
  2. আইনি পদক্ষেপ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ: আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার আইন অনুযায়ী, জোরপূর্বক স্থানান্তর ও বেসামরিক জনগোষ্ঠীর উচ্ছেদ যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) বা জাতিসংঘের বিশেষ অধিবেশন মাধ্যমে এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। যারা এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী – নির্বাহী থেকে শুরু করে সামরিক কমান্ডার পর্যন্ত – তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও সম্ভব হলে বিচার করা জরুরি। এছাড়া ইসরায়েলের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমেও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যেতে পারে, যেমন ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা এবং সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন করে উচ্ছেদ আদেশ বাতিলের চেষ্টা চালানো। আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের এসব কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করা হলে একটি নৈতিক চাপ তৈরি হবে এবং হয়তো ইসরায়েল এই নীতি পুনর্বিবেচনা করবে।
  3. স্থানীয় প্রতিরোধ ও গণজাগরণ অব্যাহত রাখা: মাসাফার ইয়াত্তার অধিবাসীরা ইতোমধ্যে অসাধারণ সাহসিকতায় নিজেদের ভূমি রক্ষার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই স্থানীয় প্রতিরোধ আরও সংঘবদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে চলমান রাখা গুরুত্বপূর্ণ। গণআন্দোলন, প্রতিবাদ, মিডিয়া ক্যাম্পেইন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে #SaveMasaferYatta আন্দোলন জারি রেখে বিশ্বব্যাপী জনমতকে সক্রিয় রাখা দরকার। বস্তুত, “No Other Land” নিজেই এই গণজাগরণের অংশ; তাই এমন আরও তথ্যচিত্র, ফটোপ্রদর্শনী, প্রতিবেদন তৈরি করে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি শান্তিকামী নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদও সমাধানের পথ খুলতে সহায়ক হতে পারে, কারণ অভ্যন্তরীণ সমালোচনা ইসরায়েলের নীতিনির্ধারকদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।
  4. রাজনৈতিক সংলাপ ও সমাধানের উদ্যোগ: দীর্ঘমেয়াদে মাসাফার ইয়াত্তার সমস্যার স্থায়ী সমাধান নির্ভর করছে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বৃহত্তর সংঘাতের রাজনৈতিক মীমাংসার ওপর। দুই রাষ্ট্র সমাধান (টু-স্টেট সল্যুশন) হোক বা সমান অধিকার ভিত্তিক একক রাষ্ট্র সমাধান, যে কোনটিই হোক – উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থা ও ন্যায়ভিত্তিক সমঝোতা প্রয়োজন। চলচ্চিত্রটির একজন পরিচালক যেমন বলেছেন, “জাতিগত আধিপত্যবিহীন, উভয় জাতির অধিকার সমান্তরালভাবে স্বীকার করে এমন রাজনৈতিক সমাধান” অনুসন্ধান করতে হবে। তাই আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় পুনরায় শান্তি আলোচনা শুরু করে পশ্চিম তীরের ভূমি নিয়ে স্পষ্ট ও ন্যায়সংগত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো আবশ্যক। বিশেষত মাসাফার ইয়াত্তার মতো স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোতে আলাদা করে নজর দিয়ে সেখানে বিদ্যমান গ্রামগুলোর স্বীকৃতি, সুরক্ষা এবং উন্নয়নের ব্যবস্থা নিতে হবে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ যদি সত্যিই নিরাপত্তা উদ্বেগ থেকে এলাকাটিকে সেনা মহড়ার জন্য প্রয়োজনীয় মনে করে, তাহলে বিকল্প জায়গায় সে ব্যবস্থা করতে পারে – বেসামরিক লোকজনের আবাসস্থল ধ্বংস করে নয়।
  5. মানবিক সহায়তা ও পর্যবেক্ষণ মিশন: যখন পর্যন্ত সংকট পুরোপুরি সমাধান না হবে, তখন পর্যন্ত মাসাফার ইয়াত্তার পরিবারগুলোকে রক্ষা করতে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর সক্রিয় উপস্থিতি জরুরি। জাতিসংঘ বা স্বতন্ত্র শান্তিরক্ষী/পর্যবেক্ষক দল ঐ এলাকায় মোতায়েন করে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ এবং নথিভুক্ত করা যেতে পারে। এটি সংঘটিত কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন দ্রুত বিশ্বকে অবহিত করতে সাহায্য করবে এবং নিরপরাধ বাসিন্দাদের ওপর চরম সহিংসতা নেমে আসা কিছুটা হলেও আটকাতে পারে। পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য জরুরি আশ্রয়, খাবার পানি, চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন দেশ ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে এসে মাসাফার ইয়াত্তার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পুনর্বাসনে সহযোগিতা করতে হবে। আন্তর্জাতিক সংহতি যদি মাঠপর্যায়ে সহায়তায় রূপ নেয়, তবে তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এবং ইসরায়েলকেও দেখাবে যে এই পরিবারগুলো একা নয় – পুরো পৃথিবী তাদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত।

পরিশেষে, “No Other Land” আমাদের চোখের সামনে দুর্দশার এক বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে, কিন্তু এর মধ্যেই আশা ও পরিবর্তনের বীজও উপস্থিত। এই প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে যেভাবে বিশ্বজনমত সংগঠিত হচ্ছে, তা ভবিষ্যতে মাসাফার ইয়াত্তা তথা ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের পক্ষে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। সংকট সমাধানের পথ সহজ নয়, তবু আন্তরিক প্রচেষ্টা, ন্যায়বোধ এবং বৈশ্বিক সংহতির মাধ্যমে এমন এক ভবিষ্যৎ কল্পনা করা যায়, যেখানে আর কোনো জমি “No Other Land” বলে হাহাকার করতে হবে না – প্রত্যেক মানুষ তার নিজ ভূমিতে শান্তি ও মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারবে।

সুতরাং, চলচ্চিত্রটি যে প্রশ্নগুলো তুলে দিয়েছে, সেগুলোর জবাব খুঁজতে এখনই উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন: ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই অন্যায় উচ্ছেদ বন্ধ করা এবং মাসাফার ইয়াত্তার মানুষের জন্য একটি নিরাপদ, সম্মানজনক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা।

Share.
Leave A Reply

error: Content is protected !!
Exit mobile version