ভূমিকা

২০২৫ সালের ১৭ মার্চ গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার ঘটনা বিশ্বজুড়ে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এর আগে ১৯ জানুয়ারী থেকে কার্যকর হওয়া দুই মাসের একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি ১৮ মার্চ ইসরায়েলি হামলার মাধ্যমে ভেঙে যায। এই ঘটনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। কেন ইসরায়েল এই যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করলো? ফিলিস্তিনিদের কি তাদের নিজেদের ভূমিতে বসবাসের কোনো অধিকার নেই? এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন ইসরায়েলকে এত দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে? এই ব্লগ পোস্টে আমরা এই প্রশ্নগুলোর সঠিক ও সত্য উত্তর অনুসন্ধানের চেষ্টা করবো।

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের কারণ

ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পেছনে উভয় পক্ষের নিজস্ব ভাষ্য রয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে যে গাজায় আটক থাকা তাদের ৫৯ জন বন্দীকে মুক্ত করার জন্যই তারা পুনরায় সামরিক অভিযান শুরু করেছে। তাদের অভিযোগ, হামাস পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহ করছিল এবং নতুন হামলার পরিকল্পনা করছিল। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে বলেছেন যে হামাস বন্দীদের মুক্তি দিতে বা যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর প্রস্তাব মেনে নিতে অস্বীকার করায় তিনি “কঠোর ব্যবস্থা” নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হামাসের “সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু”র উপর “ব্যাপক হামলা” চালানোর ঘোষণাও দিয়েছে। এই ভাষ্য থেকে বোঝা যায়, ইসরায়েলের প্রধান উদ্বেগ তাদের বন্দীদের নিরাপত্তা এবং হামাসের ভবিষ্যৎ সামরিক সক্ষমতা। তাদের এই পদক্ষেপকে তারা নিজেদের নাগরিকদের রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় হিসেবে মনে করে।

অন্যদিকে, গাজার শাসক গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে “গণহত্যা” অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে। হামাসের মতে, ইসরায়েলের এই হামলা ১৯ জানুয়ারী থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির একতরফা বাতিল। তারা এই হামলাকে “সমস্ত আন্তর্জাতিক ও মানবিক কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করেছে। হামাস আরও বলেছে যে জ্বালানীর অভাব এবং বিপজ্জনক মানবিক পরিস্থিতির কারণে অনেক আহত ব্যক্তি হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারায় মারা গেছেন। হামাসের এই ভাষ্য ইসরায়েলের প্রতি গভীর অবিশ্বাস এবং সংঘাতের জন্য ইসরায়েলকেই দায়ী করে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এই বিষয়ে একটি মিশ্র চিত্র তুলে ধরেছে। আল জাজিরা জানিয়েছে যে ইসরায়েলের হামলায় ভঙ্গুর দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে গেছে এবং কমপক্ষে ৪০৪ জন নিহত হয়েছে। তারা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে যে নিরাপদ মানবিক অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত এলাকাগুলিও আক্রান্ত হয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে আরও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে ইসরায়েল সম্ভবত কখনই যুদ্ধ বন্ধ করতে চায়নি, কারণ তারা যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের পরে শত্রুতা পুনরায় শুরু না করার বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকার করেছিল। জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে যে ইসরায়েলি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে ইয়েমেনের উপর মার্কিন বিমান হামলার সাথে এই অভিযানের সময়সূচী সমন্বয় করা হয়েছিল। একইসাথে, জেরুজালেম পোস্ট এও উল্লেখ করেছে যে হামাস ১ মার্চ যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর থেকে সময়ক্ষেপণ করছিল, কারণ তারা মনে করেছিল যে তারা রমজান মাসের জন্য একটি “যুদ্ধবিরতি” অর্জন করতে এবং তাদের বাহিনী পুনর্গঠন করতে পারবে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের এই প্রতিবেদনগুলো ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি উভয় পক্ষের বক্তব্য তুলে ধরে এবং ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

উল্লেখ্য, ১৯ জানুয়ারী থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে তিনটি প্রধান বিষয় ছিল: গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করা, ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিনিময়ে ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তি এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া। প্রথম ধাপে কিছু ইসরায়েলি বন্দীর মুক্তি এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হয়, এবং একই সাথে মানবিক সহায়তা প্রবেশ করানো হয়েছিল। তবে, গাজার কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে যে ইসরায়েল ১৯ জানুয়ারী থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত বহুবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে, যার ফলে কমপক্ষে ১৭০ জন নিহত হয়েছে। এছাড়াও, ইসরায়েল ২ মার্চ যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পরে গাজায় সমস্ত মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। এই ঘটনাগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে যুদ্ধবিরতিটি শুরু থেকেই দুর্বল ছিল এবং উভয় পক্ষের মধ্যে অবিশ্বাস ও অসন্তোষ বিরাজ করছিল।

ফিলিস্তিনিদের কি তাদের ভূমিতে বসবাসের অধিকার নেই?

ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমিতে বসবাসের অধিকার একটি দীর্ঘ এবং জটিল ঐতিহাসিক ও আইনি বিষয়। ঐতিহাসিকভাবে, এই অঞ্চলটি ফিলিস্তিন নামে পরিচিত ছিল এবং কানানীয়সহ বিভিন্ন সেমিটিক জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা এখানে বাস করত, যাদেরকে আধুনিক ফিলিস্তিনিদের পূর্বপুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফিলিস্তিনিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই ভূমিতে তাদের অবিচ্ছিন্ন উপস্থিতি বজায় রেখেছে, তাদের বংশধর ফিলিস্তিনিদের কাছে খুঁজে পেয়েছে। এই ভূমি ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার খ্রিস্টান ও মুসলিম উভয়ের জন্য ধর্মীয় তাৎপর্যপূর্ণ। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।

আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবনাও এই বিষয়ে আলোকপাত করে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ প্রস্তাব ১৮১ (১৯৪৭) ফিলিস্তিনকে আরব ও ইহুদি রাষ্ট্রে বিভক্ত করার সুপারিশ করেছিল। যদিও জায়নবাদী নেতারা এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন, আরব নেতারা তা বৈষম্যমূলক বলে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। পরবর্তীতে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ প্রস্তাব ১৯৪ (১৯৪৮) সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, যেসকল ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে এবং তাদের প্রতিবেশীদের সাথে শান্তিতে বসবাস করতে ইচ্ছুক তাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা করার অনুমতি দেওয়া উচিত। এছাড়াও, সাধারণ পরিষদ প্রস্তাব ৩২৩৬ (১৯৭৪) ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ, জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং তাদের বাড়ি ও সম্পত্তিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করেছে। আত্মনিয়ন্ত্রণের ধারণা আন্তর্জাতিক আইনের একটি মৌলিক নীতি, যা জনগণকে তাদের রাজনৈতিক মর্যাদা নির্ধারণ এবং তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন অনুসরণ করার অধিকার প্রদান করে।

১৯৬৭ সাল থেকে ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি অঞ্চল (পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম সহ, এবং গাজা উপত্যকা) দখল আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিবেচিত হয়। এই অবৈধতার কারণগুলির মধ্যে রয়েছে সংযোজনের জন্য শক্তি ব্যবহার, ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার লঙ্ঘন এবং দখলদারিত্বের প্রকৃতি “বিদেশী অধীনতা” হিসেবে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ) বলেছে যে OPT-তে ইসরায়েলের অব্যাহত উপস্থিতি অবৈধ এবং ইসরায়েলকে অবশ্যই তার উপস্থিতি শেষ করতে হবে, বসতি স্থাপন কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে এবং বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নিতে হবে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাব ২৪২ (১৯৬৭) যুদ্ধে দখলকৃত অঞ্চল থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনের এই দিকগুলো ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমির উপর অধিকার এবং স্ব-শাসনের দাবীকে আরও জোরালো করে। অথচ ইসরায়েল কখনোই আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রোদ্ধাশীল নয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন ইসরায়েলকে অন্ধভাবে সমর্থন করে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলের প্রতি দৃঢ় সমর্থন একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং বহুস্তরযুক্ত বিষয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৪ মে, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রকে প্রথম স্বীকৃতিদানকারী দেশ ছিল। ১৯৬০-এর দশক থেকে, এই সম্পর্ক অর্থনৈতিক, কৌশলগত এবং সামরিক দিক থেকে একটি শক্তিশালী জোটে পরিণত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল এবং কিছু আরব রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট মার্কিন-ইসরায়েল সম্পর্কের গভীর শিকড়কে তুলে ধরে।

কৌশলগত দিক থেকে, ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আমেরিকান ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময়, ইসরায়েল এই অঞ্চলে সোভিয়েত প্রভাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপক্ষ ছিল। ইসরায়েল গোয়েন্দা তথ্য এবং উন্নত প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব প্রদান করে। কিছু বিশ্লেষক ইসরায়েলকে “মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার বিমানবাহী রণতরী” হিসেবেও উল্লেখ করেন। ইরান ও তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণে ইসরায়েলকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন মিত্র হিসেবে দেখা হয়। এই কৌশলগত জোট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের বৃহত্তম ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক সাহায্য প্রদানকারী দেশ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে তারা ইসরায়েলকে ১৩০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে। কিছু সূত্র অনুসারে, ২০২২ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ১৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য বার্ষিক বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সামরিক তহবিল (FMF) প্রদান করে। বর্তমান MOU বার্ষিক ৩.৮ বিলিয়ন ডলার প্রদান করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কর্মসূচি, যার মধ্যে রয়েছে আয়রন ডোম,কেও সমর্থন করে। ইসরায়েলের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে “প্রধান অ-ন্যাটো মিত্র” মর্যাদা রয়েছে, যা উন্নত সামরিক প্রযুক্তিতে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে। এই বিপুল আর্থিক ও সামরিক সহায়তা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করে এবং কৌশলগত জোটকে আরও শক্তিশালী করে।

অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কারণও ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন নীতির উপর প্রভাব ফেলে। মার্কিন কংগ্রেস ইসরায়েলের সাথে একটি সমর্থনমূলক সম্পর্ক বজায় রাখার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিকান ইহুদি সম্প্রদায় এবং খ্রিস্টান জায়নবাদীসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি উল্লেখযোগ্য অভ্যন্তরীণ সমর্থন রয়েছে। ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলি আটকে দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহুবার তার ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করেছে। এই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমর্থন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রশাসনকে ইসরায়েলের প্রতি দৃঢ় সমর্থন বজায় রাখতে উৎসাহিত করে।

গাজার মানবিক পরিস্থিতি

গাজায় নতুন করে সংঘাত শুরু হওয়ার ফলে সেখানকার মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ১৮ মার্চ, ২০২৫ তারিখে ইসরায়েলের নতুন হামলায় বহু শিশুসহ কমপক্ষে ৪০৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং বহু লোক আহত হয়েছে। ৭ অক্টোবর, ২০২৩ থেকে চলমান সংঘাতে মৃতের সংখ্যা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে কয়েক হাজার নিহত এবং ১ লক্ষেরও বেশি আহত হয়েছে। ইসরায়েল ২ মার্চ, ২০২৫ থেকে গাজায় সমস্ত মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এই সহায়তা অবরোধ মার্চ মাসে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলেছিল। সরঞ্জাম ও জনবলের অভাবে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত। জল সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে, জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশের নিরাপদ পানীয় জলের সুবিধা রয়েছে। গাজার বেশিরভাগ বাড়িঘর ও অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

মানবিক সূচকপরিমাণ
৭ অক্টোবর, ২০২৩ থেকে নিহত ফিলিস্তিনিকমপক্ষে ৪৮,৫০৩
৭ অক্টোবর, ২০২৩ থেকে আহত ফিলিস্তিনিকমপক্ষে ১,১১,৯২৭
১৮ মার্চ, ২০২৫ সালের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিকমপক্ষে ৪০৪
ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হওয়া বাড়ির শতাংশ৯২%
বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যাপ্রায় ১.৯ মিলিয়ন (মোট জনসংখ্যার ৯০%)
নিরাপদ পানীয় জলের সুবিধা আছে এমন জনসংখ্যার শতাংশ১০%
নিহত ইউএনআরডব্লিউএ কর্মীর সংখ্যা২৭৫
যুদ্ধবিরতির সময় ইউএনআরডব্লিউএ কর্তৃক প্রদত্ত স্বাস্থ্য পরামর্শের সংখ্যা৫০০,০০০ এর বেশি

উপসংহার

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের কারণ হিসেবে ইসরায়েল নিরাপত্তা উদ্বেগ দেখালেও, হামাস এটিকে আগ্রাসন হিসেবে দেখছে। ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমিতে বসবাসের অধিকার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং আন্তর্জাতিক আইনের দ্বারা স্বীকৃত, যদিও ইসরায়েলের দখলদারিত্ব এই অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলের প্রতি দীর্ঘস্থায়ী সমর্থনের পেছনে ঐতিহাসিক সম্পর্ক, কৌশলগত স্বার্থ এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কারণ বিদ্যমান। তবে, এই সংঘাতের ফলে গাজার মানবিক পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে, যেখানে বহু মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সম্পদের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। এই জটিল পরিস্থিতি একটি ন্যায্য ও স্থায়ী সমাধানের জরুরি তাগিদ দেয়, যা উভয় পক্ষের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য এই সংঘাতের মূল কারণগুলি, যেমন অধিকৃত অঞ্চলের মর্যাদা এবং ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের অধিকার, সমাধান করা অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, একটি ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে সহায়ক হতে পারে।

Share.
Leave A Reply

error: Content is protected !!
Exit mobile version